বাংলা ও আরবি ভাষাতত্বের মধ্যে তুলনা:


প্রাক কথন: . মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে- মানুষ যে সকল ধ্বনি দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করে তাহার নাম ভাষা। আর বৈজ্ঞানিকভাবে ভাষার পঠন পাঠন বা বিশ্লেষণকে ভাষা তত্ব বলা হয়। -( .মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ : ভাষার উৎপত্তি শহীদুল্লাহ রচনা বলি, আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ সম্পাদিত, ৩য় খন্ড পৃ: ৪৩১) সুতরাং আরবি ভাষার বৈজ্ঞানিক পঠন পাঠন বা বিশ্লেষণকে আরবি ভাষা তত্ব বলা হয়। এ পৃথিবীতে মানব জাতির ভাষা অনির্ধারিত। তবে .মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, ২৭৯৬ টি ভাষা পৃথিবীতে প্রচলিত আছে। তন্মধ্যে দুটি ভাষা নিয়ে তুলনামুলক আলোচনা করা হলো।
যথা: . বাংলা ভাষাতত্ত্ব . আরবি ভাষাতত্ত¦
পৃথিবীর ভাষাগুলো কতটি গুচ্ছে বিভক্ত তাও মতবিরোধের উর্ধ্বে নয়। আল্লামা শিবলী নুমানী আল্লামা সৈয়দ সুলায়মান নদভী ভাষা পরিবারকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেন। যথা:-
. আর্য বা ইন্দো-ইউরোপীয় যার অন্তুর্ভুক্ত রয়েছে বাংলা, সংস্কৃত, ফরাসী, ল্যাটিন, ইংরেজী ইত্যাদি।
. সেমেটিক/হেমেটিক যার অন্তর্ভুক্ত হলো হিব্রূ, আরামী, আরবি ইত্যাদি।
গ. তুরানী বা মঙ্গোঁলীয়া যার মধ্যে চৈনিক, জাপানী, তুর্কী ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত। -(শিবলী নুমানী: মাকালাতে শিবলী, ২য় . (আদাবী) আযমগড়, ১৯৫০ পৃ. )

আরবি বাংলা ভাষাতত্বের মধ্যে তুলনা:
আরবি ভাষাতত্ত্ব: আরবি ভাষাতত্বের আরবি প্রতিশব্দ فقه اللغة  এবং শব্দটি فقه لغة শব্দদ্বয়ের সমষ্টি। فقه শব্দটির অর্থ বুঝা, উপলদ্ধি করা, জ্ঞান, বুদ্ধি শাস্ত্র ইত্যাদি। আর لغة শব্দটি একবচন বহুবচনে لغات- لغى -ইত্যাদি অর্থ ভাষা। সুতরাং অর্থ ভাষাশাস্ত্র বা ভাষাতত্ত্ব।
পারিভাষিক পরিচয়: ভাষাতাত্ত্বিক . মোঃ আবু সিক্কিন বলেন- هو منهج للبحث استقرائى و صفى يعرف به أصل  اللغة التى يراد درسها و موطنها الأول و فضيلتها وعلاقتها بالغات المجاورة أو البعيدة الشقيقة أو الاجنبية وخصائصهاوعيبها ولهجاتها.واصواتها وتطور دلالتها ومدى نهائها وقرائة وكتابة (..মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ আবু সিক্কিনفقه اللغة  পৃ নং )
. সাইয়েদ কাদিরের মতে,ভাষার উদ্ভব ক্রম বিকাশ এবং ভাষার ধ্বনি সংগঠন, ধ্বনি পরিবর্তন, ধ্বনি সমাবেশে অক্ষর সৃষ্টি, অক্ষর মিলনে শব্দ বাক্য নিরূপণ, অর্থের পরিবর্তন প্রভৃতি পরীক্ষা করে ভাষার অন্তর্গত স্বরূপ বিশ্লেষণ করাই ভাষাতত্ত্বের কাজ।
৩. ভাষাতত্ত্ব হলো এমন একটি সামগ্রিক বর্ণনামূলক পদ্ধতি বা আলোচ্য বিষয়, যার সাহায্যে ভাষার প্রথম বা আদি বাসস্থান, তার শাখা-প্রশাখা পার্শ্ববর্তী অথবা দূরবর্তী একই মূলের বা ভিন্ন দেশের ভাষাসমূহের সাথে এর সম্পর্ক, এর ধ্বনি বৈশিষ্ট্য, একক বা যৌগিক শব্দরীতি, বাকভঙ্গির উপাদানসমূহ, অর্থ নির্দেশে ক্রমোন্নয়ন এর ক্রম বিকাশের দীর্ঘ সময়ের রীতি যা মৌখিক লিখনের মাধ্যমে জানা যায়। এটি .মুহাম্মদ আবু সিক্কীন এর মত।
আরবি ভাষাতত্ত্বের উৎপত্তি: ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়,  ইসলামের প্রথম শতাব্দীতেই আরবি ভাষাতত্ত্বের উৎপত্তি হয়। ইসলামের বাণী যখন হেজাজের ভূমি পার হয়ে বিজয়ী বেশে অন্যান্য দেশে প্রবেশ করে, তখন নব বিজীত দেশের লোকেরা আরবি শিখতে লাগল। এক লোক পবিত্র কোরাআনের Ñان الله برى من المشركين و رسو له  (সুরা তাওবা আয়াত নং )
এর মধ্যে رسوله শব্দের لام- যের দিয়ে পড়লে ঘটনাটি হযরত আলী (রা:) এর নিকট উত্থাপিত হয়, তিনি কুরআন আরবি ভাষাকে ধ্বংসের হাত হতে রক্ষার জন্য ابوالا سواد الدويلى-কে কতিপয় নিয়ম তৈরির নির্দেশ দেন। অতঃপর তিনি এই ব্যাপারে কতগুলো নিয়ম কানুন তৈরী করার ফলে ভাষাতত্ত্বের উদ্ভব হয়। -( ( মুসলেহ উদ্দীন আরবি সাহিত্যের ইতিহাস ১৮৯)
আহমদ হাসান যাইয়্যাত- ভাষাতত্বের সর্ব প্রথম গ্রন্থ রচনাকারী আবুল আসওয়াদ আদদুয়াইলীকে স্বীকার করেন এর নির্দেশদাতা ইরাকের শাসনকর্তা যিয়াদ’ যেমন-والى الاوليين يرجع الفضل فى تكوينه و تدوينه فمنهم ابو الاسود الدو لى و اوضعه .    -(আহমদ হাসান যাইয়্যাত, তারীখূল আদাবিল আরবি, পৃ নং ২৬৭)
আরবি ভাষার ক্রমবিকাশ:
আবুল আসওয়াদ দুয়াইলির পর আরবি ভাষা তত্বেও বিকাশ ঘটতে থাকে। এবং কাজে মনোনিবেশ করেন এক ঝাক ভাষা বিজ্ঞানী তন্মধ্যে- مدرسة البصرة  مدرسة الكوفة ومدرسه بغداد وغيرها  অত্র বিদ্যালয়ের ভাষাবিদরা নাহু- ছরফ ছাড়া অসংখ্য শব্দ নিয়ে গবেষণা করেন। সম্পর্কে আহমদ হাসান যাইয়্যাত বলেন, ثم تناول منهم ادباء البصرة و الكوفة فكلموه وفصلوه ক্ষেত্রে বসরা গবেষকগণ যথেষ্ট অবদান রাখেন। -(প্রগুক্ত হাসান যাইয়্যাত পৃ নং )
ইতিহাসবিদ গোল্ড জিহার বলেন, The phlogist of the school of basara did not deal with the kmothy problems of grammar only but also they research into problems of Arabic Vocabulary.
বসরার ভাষাবিদগণ: আরবি ভাষা তত্বে বসরার যেসব ভাষাবিদ অবদান রেখেছেন তারা হলেন আবুল  আসওয়াদ আদ দোয়াইলি, খলিল ইবনে আহমদ আল ফরাহিদী, সিবওয়াইহ,  আবু আমর ইবনে আলা, আবুল খাত্তাব আল আখফস, ইবনে দুরাইদ আল মুর্বারাদ, ইত্যাদি।
কুফার গবেষকগণ: এর পর কুফার গবেষকদের  মধ্যে যারা আরবি ভাষাতত্বে অবদান রাখেন তারা হলেন- আল কিসাই, আল ফররা আস সা’লাব, আবু বকর আল আনবারী। এর পর বাগদাদের বিদগ্ধ পন্ডিতদের কথা না বললেই নয়। বাগদাদের ভাষা তত্ববিদদের মধ্যে যারা অসামান্য অবদান রেখে চির অমর হয়ে রয়েছেন তারা হলেন আবুল কাসেম আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাক আয যুজাযী, আবু আলী আল হাসান ইবনে আহমদ আল ফারেসী, আবুল ফাতাহ উসমান ইবনে জিন্নী, আজ যুবাইদী ইবনুল আখফাস প্রমূখ। এভাবে হাজার হাজার আরবি ভাষাতত্ববিদ আরবি ভাষা বিকাশে অবদান রাখেন।
আরবি ভাষার বিবর্তন রূপ স্থান উৎস:
ভাষা তত্ববিদগণের মতে- পৃথিবীর সমস্ত ভাষা তিনটি ভাষার অর্ন্তভূক্ত আর আরবি হল তার মধ্যে প্রাচীন নুহ : পুত্র সাম তথা সেমেটিক ভাষার অর্ন্তগত। পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিমসহ আরবদেশগুলোর লোকেরা আরবি ভাষা ব্যবহার করে। আরবি ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক থেকে ৬ষ্ঠ স্থানে অবস্থান করছে। প্রফেসর আর নিকলসন প্রাচীন উপভাষাগুলোর প্রাপ্ত সাহিত্যাদি উৎকীর্ণ লিপি ইত্যাদি বিবেচনান্তে কালানুক্রমিক বিন্যাসে ভাষাগুলোর নিন্মরূপ একটি তালিকা প্রণয়ন করেছেন। যথা:
. বিলিয়ন বা অ্যাসিরিয়ান (৩০০-৫০০ খৃ, পূ.)
. হিব্রু (১৫০০ খৃ. পূ.)
. দক্ষিণ আরবি (৮০০ খৃ. পৃ:)
. আরমাইক বা আরামী ( ৮০০ খৃ. পৃ.)
. ফেনিশিয়ান বা ফীনীকী (৭০০ খৃ. উৎকীর্ণ লিপি)
. ইথিওপিক বা হাবশী (৩৫০ খৃ. তে বা পরে)
. আরবি (৫০০ খৃ হতে)
মূল সামী ভাষা হতে নির্গত ভাষাগুলোর তালিকা প্রদত্ত হলো:
পশ্চিম-পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম ব্যবিলনিয়ন এ্যসিরিয়ন, হাবশী আরবি, নবতী, কানআনী, আরামী, দক্ষিণ আরবি, উত্তর আরবি, হিব্রƒ, ফেনিশিয়ান, সুরয়ানী, আরবি--মূবিন (ফীনীকি) (সিরিয়ক)
আরবি ভাষার উৎপত্তি ক্রম বিকাশ: পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল আরবি। ঠিক কখন  থেকে আরবি ভাষা উৎপত্তি লাভ করেছে এবং পৃথিবীতে বিকাশ লাভ করে তার কোন সঠিক বর্ণনা ইতিহাসবিদগণ নিরব। তবে . আলী আব্দুল ওয়াহিদ ওয়াফী উল্লেখ করেছেন যে, আরবি ভাষা হিজায নজদ এলাকায় উৎপত্তি লাভ করে।
এর সূচনা কাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে:
. পৃথিবী সৃষ্টির পর মানব অঙ্গনে সর্ব প্রথম যিনি আরবি ভাষায় কথা বলেছেন- তিনি হলেন হযরত আদম আঃ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন,
ان ادم عليه السلام كان لغته فى الجنة العربية فلما عصى سلبه الله العربية فتكلم بالسريا نية فلما تاب رد عليه العربية
. আব্দুল মালিক ইবনে হাবিব (মৃত ৮৭৪খৃ) নুহ আঃ এর মহা প্লাবনের পরজুরহুম’ নামক এক ব্যক্তি আরবি ভাষায় কথা বলেছিলেন।
. নবী করিম (সাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস হতে জানা যায়-أول من فتق العربية لسانه با لعربية المتينة إسماعيل عليه السلام  وهم ابن عشرة سنة 
. বর্ণনার স্বপক্ষে আরেকটি বর্ণনা উল্লেখযোগ্য, মুহাম্মদ ইবনে সালাম (মৃ ৮৪৬খৃ) বলেন-اول من تكلم اسماعيل عليه السلام আরবি ভাষায় যিনি সর্ব প্রথম কথা বলেছিলেন তিনি হলেন আল্লাহর নবী ইসমাইল : এবং তিনি পিতার ভাষা ভুলে গিয়েছিলেন।
. আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ূতী (রহঃ) (মৃ ১৫০৫) বায়হাকী শরীফের উদ্বৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছেন নবী করিম সা: বলেছেন, اللهم إسماعيل –عليه السلام اللسان العربى الهاما ইসমাইল : অন্তরে আরবি ভাষার প্রেরণা প্রদত্ত হয়।
উপরোক্ত আলোচনায় সুস্পষ্ট হলো যে, আরবি ভাষায় সর্বপ্রথম কথা বলেছিলেন আদম আঃ তিনি আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কারনে আল্লাহ তাঁর নিকট হতে আরবি ভাষা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এবং তওবা করার ফলে পূণরায় তাকে আরবি ভাষা দান করা হয়। দীর্ঘদিন ভাষা প্রচলিত ছিল। কালক্রমে আরবি ভাষা সুরইয়ানী ভাষায় রূপান্তরিত হয়। সুরইয়ানী ভাষা আরবি ভাষারই একটি বিকৃত রূপ। আর নুহ : এর নৌকার সকল যাত্রীই ভাষায় কথা বলতেন। তবে জুরহুম নামক এক ব্যক্তি যার ভাষা ছিল আরবি, তার উত্তর পুরূষদের মধ্যে ভাষা প্রচলিত ছিল। অপরদিকে হযরত ইসমাঈল (:) আল্লাহ কর্তৃক আরবি ভাষা প্রদত্ত হন। এবং তার বংশধররাই এক পর্যায়ে জুরহুমের অধঃস্তন বংশধর বুন কাহতান হযরত ইসমাঈল (:) এর উত্তর পুরূষের সাথে মিলিত হয় এবং একত্রে বসবাস করতে হয়। বনি ইসরাঈলের নিকট হতে তারা আরবি ভাষা শিক্ষা করে। এমনিভাবে কুরআন নাযিলের পূর্ব পর্যন্ত আরবি ভাষার ব্যবহার অব্যাহত থাকে। ক্রমান্বয়ে আজ পর্যন্ত আরবি ভাষার প্রচলন হয়ে আসছে।
আরবি ভাষাতত্বের আলোচ্য বিষয়: ভাষার সাংগঠনিক উপাদান বিভিন্ন হওয়ার কারনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হল:
. ভাষার উৎপত্তি।
. ভাষার অস্তিত্ব (উপভাষা এর অর্ন্তভুক্ত)
. ধ্বনিতত্ব বা ইলমুল আসওয়াত।
. অর্থ তত্ব।
. বাক্য তত্ব।
৬.. শৈলী তত্ব।
. ব্যুৎপত্তিতত্ব।
. সমাজ ভাষাবিজ্ঞান।
. মনোবিজ্ঞান।
১০. কম্পিউটারীয় ভাষাতত্ব।
১১. শিক্ষামূলক ভাষাতত্ত্ব।
১২. অভিধান বিদ্যা।
১৩. উচ্চারণীয় পরীক্ষণ বিদ্যা।
১৪. বিজ্ঞাপনী ভাষাতত্ব।
১৫. ভাষার খুঁটিনাটি বিষয় পরীক্ষা।
১৬. জীবতাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞন।
১৭. জাতিগত ভাষাবিজ্ঞান।
১৮. গাণিতিক ভাষাবিজ্ঞান।
১৯. স্নায়ুতন্দ্রীয় ভাষাবিজ্ঞান।
২০. দার্শনিক ভাষাবিজ্ঞান।
আরবি ভাষার বৈশিষ্ট্য সমূহ: আরবি ভাষা সামী ভাষা সমূহের মধ্যে একটি শাক্তিশালী, সমৃদ্ধ উন্নত ভাষা। ভাষা বিশেষ কয়েকটি বৈশিষ্টের কারনে অনুপম হয়ে আছে। যথা:
. . অবূ সিক্কীনের মতে, আরবি ভাষা সেমেটিকদের আদি ভূমিতে লালিত পালিত পরিপুষ্ট হয়েছে।
. আরবি ভাষার লালন পালন জগৎবিছিন্ন স্থানে হওয়ার কারনে সেটি অধিকতর পরিশুদ্ধ হয়েছিল।
. আরবি ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট হল- পবিত্র কুরআন এই ভাষাতেই নাজিল হয়েছে।
৪.  এটি সবচেয়ে প্রাচীনতম ভাষা যেহেতু এটি আল্লাহর ভাষা।
৫. মোস্তফা সাদিক আর রাফেয়ী বলেন- এই আরবি ভাষাকে আরবি ভাষা করে নামকরণ করা হয়েছে এজন্য যে আরবি ভাষা দ্বারা কোন বর্ণনাকে বিশদভাবে বর্ণনা দেওয়া যায়।
৬. الحركات والاعراب
৭. الالفاظ المترادفة
৮. الالفاظ ا لجامع والمانع
৯. دقة التعبير
১০.  الايجاز والاعجاز الآمثال 
১১. আরবি ব্যাকরণ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অনেকাংশ ক্রটি মুক্ত বিজ্ঞান।
১২. সেমেটিক ভাষাসমূহের মধ্যে আরবি ভাষা জীবিত। আর বাকি সব মৃত প্রায়। 
১৩. আরবি ভাষা জাতিংঘের অন্যতম ভাষা।
১৪. ভাষার অধিকাংশ শব্দ বর্ণে গঠিত।
১৫. ক্রিয়ার পদের কাল নির্ণয় জ্ঞাপক দুইটি রূপ আছে।
১৬. ভিন্ন ভিন্ন সর্বনাম লিঙ্গবচনের পরিবর্তনে সর্বনামেরও পরিবর্তন ঘটে।
১৭. সংখ্যাবাচক শব্দের জন্য বিশেষ নিয়ম নির্ধারিত।
১৮. ভাষার বর্ণমালাগুলোতে কন্ঠনালীর বর্ণের আধিক্য আছে।
১৯. এই ভাষার শব্দের আধিক্যতার কারনে অর্থেরও আধিক্য বুঝায়।
২০. এর দুটি রূপ পু:লিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গ। স্ত্র্রীলিঙ্গের নির্দিষ্ট নিদর্শন রয়েছে। এছাড়া শত বৈশিষ্টে আরবি ভাষা সকল ভাষার মাঝে অনন্য।
প্রচীন নিদর্শন: আরবি ভাষার প্রচীন নিদর্শন হলো জাহেলী যুগেরসাবয়ুল মুয়াল্লাকাতথা সাতটি ঝুলন্ত কবিতা। আর শ্রেষ্ট নিদর্শন মহাগ্রন্থ আল কুরআন। মুয়াল্লাকাগুলো জাহেলী যুগে কা’বার দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখত। জাহেলী কবিরা যেমন, ইমরুল কায়স, যুহাইর ইবনে আবি সুলমা, আনতারা ইবনে সাদ্দাত, আমর ইবনে কুলছুম, নাবিগা যুবইয়ানি প্রমুখের কবিতাগুলো এতে স্থান পায়।
বাংলা ভাষাতত্ত্ব: সাধারণত ভাষার বিশ্লেষণকে ভাষাতত্ত্ব বলা হয়। ভাষাতত্ত্বে কোনো ভাষার বিভিন্ন স্তরের ধ্বনি রূপ পদের সংগঠন বিশ্লেষণ করা হয়।
ভাষাবিজ্ঞান: প্রখ্যাত বাংলা সাহিত্যিক ভাষাবিজ্ঞানী . হুমায়ুন আজাদ বলেন: ভাষাবিজ্ঞান বা ভাষার বিজ্ঞান, ভাষা বিষয়ক একভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ, ওই উপাত্তের আভ্যন্তর শৃঙ্খলা উদ্ঘাটন এবং ওই শৃঙ্খলা সুস্পষ্ট সুত্রের সাহায্যে প্রকাশ করা ভাষা বিজ্ঞানের কাজ। সুতরাং বাংলা ভাষাতত্ত্ব হলো, বাংলা ভাষার বিশ্লেষন এবং বাংলা ভাষার বিভিন্ন স্তরের ¦নি-রূপ পদের সংগঠন বিশ্লেষন করা।
বাংলা ভাষাতত্ত্বের/ব্যাকরণের উৎপত্তি সময়কাল: পর্তুগিজ পাদ্রি মনোএল দা আসসম্পসাঁউ রচিত ভোকাবুলারি এম ইদিওমা বেনগল্লাই পর্তূগিজ গ্রন্থেও ব্যাকরণ অংশই বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ, কিন্তু এটি প্রথম ব্যাকরণ গ্রন্থ নয়। এটি ১৭৩৪ খ্রিষ্টাব্দে রচিত। ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগালের রাজধনী লিসবন শহর থেকে রোমান লিপিতে মুদ্রিত প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ গ্রন্থ নাথিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড রচিত। এই গ্রন্থটি ১৭৭৬ খৃ. প্রধানত ইংরেজি অংশ বাংলায় রচিত এবং ১৭৭৮ খৃ. হুগলি থেকে মুদ্রিত প্রকাশিত হয়। এরপর উইলিয়াম কেরি ১৮০১ সালে গঙ্গাঁকিশোর ভট্রাচার্য ১৮১৬ সালে, কিথ সাহেব ১৮২০ সালে বাংলা ব্যাকরণ রচনার প্রয়াস পান। কিন্তু এই সবগুলোই ইংরেজি ভাষার লেখা ১৮২৬ সালে রাজা রামমোহন রায় ইংরেজিতে বাংলা ব্যাকরণ লেখেন। এরপর তিনি ১৮৩৩ সালে স্কুল বুক সোসাইটির জন্য ওই গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করে নাম দেন গৌড়ীয় ব্যাকরণ সে বিচারে এই গ্রন্থটি প্রথম বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থ।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি ক্রমবিকাশ: . মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষার উৎপত্তিকাল সম্পর্কে বলেন, বাংলা ভাষা সপ্তম শতাব্দীতে জন্ম লাভ করে। স্যার জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সন, সুনীতিকুমার চট্রোপাধ্যায়সহ অধিকাংশ পন্ডিত বলেছেন, দশম শতাব্দীতে বাংলা ভাষার উৎপত্তি। হাজার বছর আগে প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা রূপান্তরিত বঙ্গীয় আদলে জন্ম নিয়েছিল এক মধুর কোমল বিদ্রোহী প্রাকৃত। তার নাম বাংলা। ওই ভাষাকে  কখনো বলা হয়েছে প্রাকৃতকখনো বলা হয়েছে গৌড়ীয় ভাষা। কখনো বলা হয়েছে বাঙ্গলা বা বাঙ্গালা। এখন  বলি বাংলা . সুনীতি কুমার চট্রোপাধ্যায় মনে করেন দশম শতকে ৯০০ থেকে ৯৫০ খ্রি. এর কাছাকাছি সময়ে মাগাধি অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার জন্ম। কিন্তু . মু শহীদুল্লাহ মনে করেন, সাত শতকে ৬০০খ্রি. এর কাছাকাছি সময়ে গৌড়িয় অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার জন্ম। প্রথম থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত সময়ের বাংলা ভাষাকে তিন যুগে ভাগ করা হয়। যেমন:
. প্রাচীন যুগ: ৬৫০-১২০০ খ্রী. পর্যন্ত।
. মধ্যযুগ: ১২০০-১৮০০ খ্রী. পর্যন্ত।
. আধুনিক যুগ: ১৮০০-থেকে বর্তমান পর্যন্ত।
এর মধ্যে ১২০০-১৩৫০ খ্রী. পর্যন্ত কালকে সন্ধি যুগ বা অন্ধকার যুগ ধরা হয়। তবে বর্তমান গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যুগ অন্ধকার যুগ নয়।
বাংলা ভাষা পরিবার, স্থান বিবর্তন: বাংলা ভাষা ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর অর্ন্তভূক্ত। এটি পৃথিবীর প্রধান ভাষা সমূহের মাঝে মাতৃভাষার বিবেচনায় ৪র্থ স্থান দখল করে আছে। নিম্নে কয়েকটি প্রধান ভাষা তার স্থান এবং প্রধান দেশ সমূহের নামের তালিকা দেয়া হল:
. চৈনিক (মেন্ডারিন, বাউ কেন্টোনেসে) চীন,তাইওয়ান, থাইল্যান্ড।
. স্প্যানিশ (স্পেন, ইতালি, আমেরিকা)
. ইংরেজি (আমেরিকা, যুক্তরাজ্য)
. বাংলা (বাংলাদেশ, ভারত)
. আরবি  (সৌদি আরব, মিশর ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আরব আমিরাত)
. হিন্দি (ভারত)
. পর্তুগিজ (পর্তুগাল, ব্রাজিল)
মূলত বাংলা ভাষা মাগধী প্রাকৃতের অপভ্রংশ থেকেই কালাক্রমে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে উৎপত্তি লাভ করে। নিম্নে বাংলা ভাষার বিবর্তনের রূপ রেখা তুলে ধরা হল:
ইন্দো-ইউরোপীয়
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার ২টি শাখা কেন্তম সতম (৩৫০০ খ্রী.পূ.)
সতম আবার প্রকার। যথা- . আলবানিক . আর্মানিক . বাল্টোস্লাডিক . আর্য (২৫০০ খ্রী.পূ.)
আর্য আবার প্রকার। . দারদিক . ইরানিক . ভারতীয় (১২০০-১৫০০ খ্রী.পূ.) ভারতীয় আবার প্রকার। যথা-
. বৈদিক (ঋগে¦)
. প্রাক-ভারতীয় আর্য (১০০ খ্রি.পূ.)
প্রাচীন আর্য (আদিম প্রাকৃত ৮০০ খ্রি.পূ.) ভাগে বিভক্ত। .প্রাচীন উদীচ্য . প্রাচিন শৌরসেনি . অশোকলিপির ভাষা . পালি . প্রাচীন প্রাচ্য (৪০০ খ্রী.পূ.)
*প্রাচীন প্রাচ্য এটি আবার প্রকার। . প্রাচীন সিংহলি . মহারাষ্টি প্রাকৃত . অর্ধমাগধি প্রাকৃত . মাগধি প্রাকৃত . গৌড়িপ্রাকৃত (আনু ২০০খ্রি.পূ) 
*গৌড়ি অপভ্রংশ (আনু ৪০০-৬০০খ্রি.পূ) . বিহারি  . প্রচীন ওড়িয়া . বঙ্গঁ কামরূপ (অনু:৫০০খ্রি)
বঙ্গ কামরূপী প্রকার:- . আসমিয়া  . বাংলা (৬৫০খ্রি)
বাংলা ভাষাতত্ত্বের আলেচ্য বিষয়:
. ভাষা পরিচয়।
. ভাষা পরিবার।
. ভাষার শ্রেণি করণ।
. ধ্বনি পরিবর্তন তার প্রক্রিয়া।
. রূপতত্ত।
. অর্থ পরিবর্তন।
. ভাষা বিজ্ঞানিক প্রতœত্ত।
. তরঙ্গতত্ব।
. বাক্য পরিবর্তন। 
১০. উপভাষা।
১১. ভাষারীতি।
প্রাচীন নিদর্শন: বাংলা ভাষার  প্রাচীন নিদর্শন হলো চর্যাপদ। এটি নেপালের রাজদরবারের রাজ সংগ্রহশালায় পাওয়া যায়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে এটি আবিষ্কার করেন। এর মধ্যে ২৩/২৪টি কবিতা ছিল। ৪১টি শ্লোক ছিল। এর শেষ বর্ণ ছিল ‘পা এটি বৌদ্ধদের ধর্ম গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত। বাংলার প্রাচীন লিপি হলো ব্রাহ্মীলিপি।
সাদৃশ্য:
আরবি
* আরবি ভাষা অতিপ্রাচীন।
* আরবি ভাষায় সর্বনামের ব্যাবহার আছে।
* আরবি ভাষা জাতিসংঘের ভাষা।
* আরবি ভাষাতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় শব্দতত্ত্ব।
* আরবি ভাষাও অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত আছে।
* স্বরধ¦নি ব্যঞ্জন ধ্বনির ব্যবহার।
বাংলা
* বাংলা ভাষাও অতিপ্রাচীন।
* বাংলা ভাষারও সর্বনামের ব্যবহার আছে।
* বাংলাও জাতিসংঘের ভাষা।
* বাংলা ভাষাতত্ত্বেরও আলেচ্য বিষয় শব্দতত্ত্ব।
* বাংলায়ও তদ্রুপ ভবিষ্যত তিনটা কালে ক্রিয়াপদ ব্যবহৃত হয়।
* বাংলায়ও অনুরূপ ব্যবহার আছে।
বৈসাদৃশ্য: আরবি বাংলার মাঝে কিছু সাদৃশ্য থাকলেও এতে অনেক বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-
আরবি
* এটি দুনিয়া আখেরাতের ভাষা অমরন।
* আরবি আল্লাহর ভাষা।
* আরবি ভাষার অতীতকাল বুঝানোর জন্য ছয়টি ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়।
* অরবি ভাষাতত্ত্ব চর্চা অত্যাধিক।
* আরবি ভাষার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন কুরআন।
* আরবি কম শব্দে বেশি অর্থ প্রকাশে সক্ষম।
* আরবি ভাষার মধ্যে অন্য ভাষার মিশ্রণ খুব কম।
বাংলা
* বাংলা শুধু দুনিয়ার ভাষা মরণশীল।
* এটি মানব রচিত ভাষা।
* কিন্ত বাংলা কোন ঐশ্বরিক ভাষা নয়।
* আরবির তুলনায় বাংলা ভাষাতত্ত্বর চর্চা খুবই কম।
* বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন চর্যাপদ।
* বাংলা ভাষা তাতে তত সক্ষম নয়।
*কিন্তু বাংলা ভাষার ইংরেজি ফারসি, অনারবি শব্দের জন্য ভিন্ন পরিভাষা রয়েছে। উর্দু ইত্যাদি অনেক ভাষার মিশ্রণ রয়েছে। ভিন্ন ভাষার শব্দের জন্য ভিন্ন কোন পরিভাষা নেই।
এছাড়া অনেক বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান যেগুলো দ্বারা আরবি ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব প্রামাণিত হয়।
মন্তব্য: পরিশেষে বলা যায়, আরবি ভাষাতত্ত্ব সমৃদ্ধ অনন্য বৈশিষ্ট মন্ডিত বাংলা ভাষার তুলনায়। তবে দুইটির আলোচ্য বিষয়ের ক্ষেত্রে অনেকটা মিল রয়েছে।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বায়তুল হিকমার পরিচয়:

আব্বাসীয় যুগে সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ

ইবনে কুতাইবার জীবনী